বাচ্চা কে কখন কিভাবে বাড়তি খাবার দিবেন?

সব বাবা মা ই বাচ্চার খাবার এবং স্বাস্থ্য নিয়ে খুব চিন্তিত থাকেন। অনেক বাবা মা মনে করেন বাচ্চা শুকনা মানে বাচ্চা ঠিকমত খাবার পাচ্ছে না। তাই বাচ্চা মোটা করার জন্য জোর করে ঘনঘন বেশি খাবার দিতে থাকেন। কিন্তু মোটা হওয়া মানেই সবসময় স্বাস্থ্যবান বাচ্চা এমন নয়। সবসময় খেয়াল রাখতে হবে বাচ্চা সুস্বাস্থ্যের অধিকারী কিনা।

অনেক বাবা মা বাচ্চা কে সলিড কখন থেকে দিবেন, কিভাবে শুরু করবেন, কি দিবেন বুঝে উঠতে পারেন না বিশেষ করে যারা নতুন বাবা মা। এই পোস্টের পরে আশা করি আপনারা কিছুটা ধারণা পাবেন।

►► আপনার বাচ্চা সলিড খাবার গ্রহণের জন্য প্রস্তুত কিনা?

প্রথমে এটা বুঝতে হবে। সাধারণত ৬ মাস বয়সে বাচ্চারা আস্তে আস্তে সলিড খাবার গ্রহণের জন্য প্রস্তুত হয়ে যায়। অনেক বাচ্চা ৪-৬ মাসের মাঝেই অল্প পরিমাণে সলিড খাবার গ্রহণে সক্ষম হয়। এই বয়সেই বাচ্চারা খাবার মুখে নিয়ে নাড়াচাড়া করা এবং গিলতে সক্ষম হয়।
কিছু লক্ষণ আছে যা দেখে সহজে বোঝা যায় বাচ্চা সলিড গ্রহণের উপযুক্ত হয়েছে কিনা!
► ১. খেয়াল করুন আপনার বাচ্চা নিজের মাথা কি সোজা করে উপরের দিকে তুলে ধরতে পারে?
► ২. কোনো কিছুর সাহায্যে নিয়ে আপনার বাচ্চা বসে থাকতে পারে কিনা?
► ৩. বাচ্চা নিজের হাত এবং খেলনা খেতে চায় কিনা? 
► ৪. আপনি তার সামনে কিছু খেলে সে আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে থাকে কিনা বা খেতে চায় কিনা?

উপরের ৪ টি প্রশ্নের উত্তর যদি হ্যা হয় তাহলে বুঝবেন সময় হয়েছে আপনার সোনামণিকে একটু একটু করে বুকের দুধ বা ফর্মুলার পাশাপাশি সলিড খাবার দেয়ার। তবে কোনো সন্দেহ থাকলে অবশ্যই নিকটস্থ কোনো শিশু চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

তবে মনে রাখবেন বাচ্চা পর্যাপ্ত পরিমাণে বুকের দুধ পেলে ৬ মাসের আগে কোনো বাড়তি খাবারের প্রয়োজন নেই।

►► কি দিয়ে শুরু করবেন?

► হালকা কোনো খাবার দিয়ে শুরু করুন। অনেক কিছু মিশিয়ে কোনো খাবার প্রথমেই দিবেন না। বাচ্চার খাবারে প্রথমেই লবণ বা চিনি মেশানো থেকে বিরত থাকুন।

► যে কোনো একটা খাবার দেয়ার পর ৩-৫ দিন অপেক্ষা করুন নতুন আরেকটা খাবার দেয়ার আগে। এতে আপনি বাচ্চার প্রতিক্রিয়া বুঝতে পারবেন। একটা খাবার দেয়ার পর যদি বাচ্চা বমি করে কিংবা এলার্জি জনিত কোনো সমস্যা হয় তাহলে সহজেই বুঝতে পারবেন কোন খাবার টা আপনার বাচ্চার খেতে সমস্যা হচ্ছে। প্রতিদিন নিত্য নতুন খাবার দিলে এই ব্যাপারটি আপনি সহজে বুঝবেন না কোন খাবারে তার সমস্যা হচ্ছে।

► সব বাচ্চা প্রথমদিকে সলিড দিলেই যে খুশিমনে খেয়ে ফেলবে এমন না। এতে চিন্তিত হবেন না এবং অবশ্যই তাকে জোর খাটিয়ে খাওয়াতে যাবেন না। নতুন স্বাদ এর খাবারে অভ্যস্ত হতে তাকে সময় দিন। সে যদি খেতে না চায় ৩/৪ দিন অপেক্ষা করুন এরপর আবার চেষ্টা করুন। তবে কোনো ভাবেই যদি সে খেতে না চায় অনেকবার চেষ্টার পরেও তবে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।

► বাচ্চার ৬ মাস থেকে ১ বছর এই সময়টায় আয়রণ এবং জিংক খুব দরকারী উপাদান। চেষ্টা করুন বাচ্চাকে যে খাবার দিচ্ছেন তাতে যেন এই দুটি উপাদান থাকে।

► বাচ্চাকে প্রথমে সবজি এবং এরপর ফল খেতে দিন। তবে অবশ্যই প্রতিটি নতুন খাবার এর আগে ৩/৪ দিন অপেক্ষা করুন উক্ত খাবারে তার কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা বোঝার জন্য।

► ৮ থেকে ১০ মাস বয়সে বেশিরভাগ বাচ্চা খাবারের ছোট টুকরা খেতে সক্ষম হয়। তখন তাকে নরম ফল, সবজি, পাস্তা, পনির, রান্না করা নরম মাংস এসব ছোট টুকরা করে খেতে দিতে পারেন।

► বাচ্চার বয়স যখন ১ বছর হতে চলবে চেষ্টা করুন তাকে তিনবেলা খাবারে অভ্যস্ত করতে। সাথে বিকেলে আপনি যা খান তা ছোট টুকরা বা একটু নরম করে তাকেও খেতে দিবেন।

► অনেকে বাচ্চা কে প্রচুর পরিমাণে জুস খেতে দেন ফিডার এ বা ড্রপারে করে। মনে রাখবেন জুস আর ফল এক নয়। অতিরিক্ত জুস বাচ্চার ওজন, ডায়রিয়া, ক্ষুধামন্দা সহ নানাবিধ সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়া সারাদিন ফিডারে জুস গ্রহণে বাচ্চার দাতের ক্ষয় হতে পারে।

যদি বাচ্চাকে জুস দিতেই হয় বাচ্চার ৬ মাস হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। এবং নিশ্চিত করুন জুস টি একদম ১০০% ফলের জুস কিনা। দিনে চেষ্টা করুন ১১৮ মিলিলিটার থেকে ১৭৭ মিলিলিটার এর বেশি জুস না দিতে। আর ফিডার বা ড্রপারে না দিয়ে বাচ্চাকে জুস কাপে নিয়ে খাওয়ানোর অভ্যাস করান।

►► বাচ্চাকে কি খেতে দিবেন না?

► চেষ্টা করুন ১ বছর বয়স হবার আগ পর্যন্ত বাচ্চা কে গরুর দুধ এবং মধু না খাওয়ানোর। গরুর দুধে শিশুর জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান নেই বরং এতে উল্টো শিশু আয়রন শূন্যতায় ভুগতে পারে। আর মধু তে বীজগুটি থাকতে পারে যাতে বাচ্চা ভালো রকমের অসুস্থ হয়ে যেতে পারে। একে ইনফ্যান্ট বটুলিজম বলে।

► এছাড়া শিশুর গলায় আটকে যেতে পারে এমন কিছু শিশুকে খেতে দিবেন না। যেমনঃ কাচা শাক সবজি, আঙ্গুর, যেকোনো ফলের বড় টুকরা, যেকোনো বীজ জাতীয় খাবার, গোটা বাদাম, শক্ত চকোলেট, পপকর্ণ ইত্যাদি।

★★ বাচ্চা খাওয়ার মাঝে বমি করে দিলে বা খেতে না চাইলে তাকে জোর করে খাওয়াতে যাবেন না। খাবার গ্রহণ বিষয়টাকে জোর জবরদস্তির না করে আনন্দময় করার চেষ্টা করতে হবে। যেন বাচ্চা যা ই খায় আগ্রহ নিয়ে খায়। বাচ্চার ক্ষুধা লাগা পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। মনে রাখবেন জোর করে ঠেসে খাওয়ানো বাচ্চার কোনো উপকারে আসবে না বরং এটা তাকে আরো খাবার বিমুখ করে তুলবে।

অনেকে বাচ্চা শুকনা থাকলে ভাবে বাচ্চা বুঝি কম খাচ্ছে । জোর করে খাওয়ায়। এটা একদম উচিত নয়। বাচ্চার বয়স অনুযায়ী যদি ওজন ঠিক থাকে এবং বাচ্চা সুস্থ থাকে তাহলে চিন্তার কিছু নেই। বরং বাড়তি ওজন ই সমস্যা।

‼ মনে রাখবেন বাচ্চা কোনো মোটা-তাজাকরণ প্রজেক্ট নয়।

বাচ্চা কে কখন কিভাবে বাড়তি খাবার দিবেন?